প্রশ্ন-১: হিন্দুদের পূজায় মূর্তির উদ্দেশ্যে বলি দেয়ার জন্য কোন মুসলিম কি তাদের কাছে পাঠা বিক্রয় করতে পারবে?
উত্তর: সাধারণভাবে অমুসলিমদের নিকট বেচাকেনায় কোন দোষ নেই। তবে শর্ত হল, হারাম কোন কিছু বিক্রয় করা যাবে না। যেমন: মদ, শুকর বা শুকরের গোস্ত, হারাম প্রাণীর গোস্ত, বিধর্মীদের ধর্মীয় প্রতীক, বাদ্যযন্ত্র, তাদের পূজার সামগ্রী এবং এমন কোন বস্তু যা মূলত: বৈধ কিন্তু তারা তা হারাম কাজে ব্যবহার করবে।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ বলেন,
“মুসলিমদের জন্য কাফেরদের উৎসবের জন্য নির্দিষ্ট খাদ্য, পোশাক, গোসল..ইত্যাদি কোন কিছুর সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করা বৈধ নয়। অনুরূপভাবে তাদের উৎসবের কাজে লাগানো হয় এমন জিনিসও এ উদ্দেশ্যে বিক্রয় করাও বৈধ নয়।”
সুতরাং আপনি যখন জানবেন যে, তারা আপনার নিকট পাঠা ক্রয় করে তাদের দেবতার উদ্দেশ্যে বলি দিবে তখন তাদের নিকট তা বিক্রয় করা বৈধ নয়। কারণ ইসলামে গাইরুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া অন্য ব্যক্তি বা বস্তুর উদ্দেশ্যে পশু জবাই বা উৎসর্গ করা বড় শিরক। আর ইসলামের দৃষ্টিতে আসমানের নিচে ও জমিনের উপরে শিরকের চেয়ে ভয়াবহ ও বড় গুনাহ আর নেই।
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে শরীক করে। আর যাকে ইচ্ছা এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ ক্ষমা করেন।” (সূরা নিসা: ৪৮)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে শরিক (অংশীদার) স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই।” (সূরা মায়িদা: ৭২)
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:
“যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে পশু জবেহ করে তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ”। (সহিহ মুসলিম, হা/ ১৯৭৮)
সুতরাং দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে বলি দেয়ার জন্য হিন্দুদের নিকট পাঠা বিক্রয় করা শিরকের কাজে সহায়তার শামিল-যা নি:সন্দেহে হারাম।
আল্লাহ তাআলা বলেন,
“আর সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সহায়তা কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তি দাতা।” (সূরা মায়িদা: ২)
প্রশ্ন-২: হিন্দুদের পূজা উপলক্ষে ফার্নিচার, মাইক, সিসি ক্যামেরা, গাড়ি ইত্যাদি ভাড়া দেয়া জায়েজ আছে কি?
উত্তর: হিন্দুরা মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সবচেয়ে ঘৃণিত কাজ করে। তা হল, মূর্তিপূজা। এটি হল, শিরক। শিরক এত ভয়ানক অপরাধ যাতে মহান আল্লাহ সবচেয়ে বেশি ক্রোধান্বিত হন এবং এই অপরাধ তিনি ক্ষমা করবেন না বলে দ্ব্যর্থ হীন ভাবে ঘোষণা করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
“নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন।” (সূরা নিসা: ৪৮)
সুতরাং কোনও মুসলিমের জন্য জঘন্য শিরকের কাজে কোনও ভাবেই সহায়তা করা বৈধ নয়। অত:এব হিন্দুদের পূজা উপলক্ষে ফার্নিচার, মাইক, গাড়ি ইত্যাদি ভাড়াও দেয়া যাবে না।
মোটকথা, পূজার কাজে ব্যবহার করার জন্য কোনও বস্তু বা উপকরণ তাদের কাছে বিক্রয় করা বা ভাড়া দেয়া বৈধ নয়। কারণ তা শিরকের কাজে সহায়তার শামিল।
আল্লাহ বলেন,
“সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” (সূরা মায়িদা: ২)
আর এ কথায় কোনও সন্দেহ নাই যে, মূর্তিপূজা ও শিরক হল, সবচেয়ে বড় পাপ ও সীমালঙ্ঘন।
তবে সিসি ক্যামেরা ভাড়া দেয়া যেতে পারে। কারণ তা মুসলিম-হিন্দু সকলের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজন।
কেননা অনেক সময় কোনও স্বার্থান্বেষী অমুসলিমরা মুসলিম সেজে পূজা মণ্ডপে আক্রমণ চালিয়ে মুসলিমদের উপর তার দোষ চাপিয়ে দেয়। সিসি ক্যামেরা থাকলে হয়ত এমন চক্রান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। সুতরাং বৃহত্তর স্বার্থে এতে কোনও সমস্যা নাই ইনশাআল্লাহ।
সৌদি আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতি বিশ্ববরণ্যে আলেম আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন বায রাহ. বলেন,
“কোনও মুসলিম পুরুষ-নারীর জন্য ইহুদি-খ্রিস্টান বা অন্যান্য কাফেরদের উৎসবে অংশগ্রহণ করা ও সহযোগিতা করা জায়েজ নয় বরং তা বর্জন করা আবশ্যক। কারণ “যে ব্যক্তি অন্য কোনও জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে তাদের সাদৃশ্য অবলম্বন ও চরিত্র গ্রহণ করার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন।
সুতরাং ইমানদার নারী-পুরুষের জন্য এ বিষয়ে সাবধান হওয়া জরুরি। এ উৎসব পালনে তাদেরকে কোনভাবেই সাহায্য করা বৈধ নয়। কেননা এগুলো শরিয়ত বিরোধী উৎসব। সুতরাং তাতে অংশগ্রহণ করা জায়েজ নেই এবং তাদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা বৈধ নয়। চা, কফি, হাড়ি-পাতিল ইত্যাদি দ্বারাও সহায়তা করা যাবে না।
আল্লাহ তা’আলা বলেন,
“আর তোমরা সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সহায়তা কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না।” (সূরা মায়িদা: ২)
আর কাফেরদের সাথে তাদের উৎসবে অংশগ্রহণ করা তাদেরকে গুনাহ এবং সীমালঙ্ঘনের কাজে সহায়তার শামিল।” [ফতোয়া বিন বায ৬/৪০৫]
◈◈ মিলিনিয়াম (সহস্রাব্দ) পালন উৎসবে অংশ গ্রহণ প্রসঙ্গে সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া কমিটির আলেমগণ বলেন,
“কোনও মুসলিমের জন্য কাফেরদেরকে তাদের উৎসবে কোনোভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করা শরিয়ত সম্মত নয়। যার মধ্যে রয়েছে: উল্লিখিত মিলিনিয়াম (সহস্রাব্দ) উদযাপন, তাদের উৎসবগুলোর প্রচার-প্রসার করা বা সেগুলো ঘোষণা করা বা এগুলোর প্রতি কোনও উপায়ে আহ্বান জানানো-চাই তা মিডিয়ার মাধ্যমে হোক অথবা ডিজিটাল ঘড়ি ও বিলবোর্ড স্থাপনের মাধ্যম হোক অথবা এ উপলক্ষে বিশেষ পোশাক তৈরি, স্মৃতিসৌধ নির্মাণ, স্কুলের খাতা ছাপানো, কার্ড বানানো, এ উপলক্ষে বাণিজ্যিক ছাড় ও আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা অথবা ক্রীড়া কার্যক্রম বা তাদের নিজস্ব লোগো প্রকাশ ইত্যাদি যেভাবেই হোক না কেনো।” (ফতোয়া লাজনা দায়েমাহ)
অবশ্য কোথাও পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে, কাফেরদের পূজা বা উৎসব পালনে সাহায্য না করলে তারা মুসলিমদের জান-মালের ক্ষতি করবে বা তাদের প্রতি জুলুম-নির্যাতন করবে তাহলে তাদের ক্ষতির হাত থেকে আত্মরক্ষার স্বার্থে যদি সহযোগিতা করতে বাধ্য হয় তাহলে ইনশাআল্লাহ দয়াময় আল্লাহ গুনাহ লিখবেন না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“আমার উদ্দেশ্যে আল্লাহ আমার উম্মতের অনিচ্ছাকৃত ভুল-ত্রুটি ও জোরপূর্বক কৃত অন্যায় ক্ষমা করে দিয়েছেন।” (ইবনে মাজাহ, হা/২০৪৫, বায়হাকি-সুনানুল কুবরা, হা/৭। হাদিসটি হাসান)
প্রশ্ন-৩: কোনও অমুসলিম পূজার জন্য ফুল চাইলে তাকে তা দিলে কি গুনাহ হবে? আর যদি সে না বলে নিয়ে যায় সেক্ষেত্রে কী হবে?
উত্তর: যদি আপনি জানতে পারেন যে, কোন হিন্দু মূর্তি পূজার জন্য ফুল ব্যবহার করবে বা পূজা মণ্ডপে ফুলের অর্ঘ প্রদান করবে তাহলে তাদেরকে ফুল দেয়া বা তাদের কাছে তা বিক্রয় করা জায়েজ নয়।
কেননা হিন্দুরা মূর্তি পূজার মাধ্যমে এ বিশ্বচরাচরের মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর সাথে শিরক (অংশী স্থাপন) করে। আর শিরক আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বড় অপরাধ।
সুতরাং আপনার ফুল দ্বারা যদি তারা এত বড় অপরাধ করে তাহলে প্রকারান্তরে আপনি তাদেরকে এতে সহায়তা করলেন। অথচ আল্লাহর নাফরমানির ব্যাপারে কাউকে সাহায্য করা ইসলামে নিষিদ্ধ।
তবে না দিলে তারা যদি আপনার ক্ষয়-ক্ষতি করবে বলে আশঙ্কা থাকে তাহলে আত্মরক্ষার স্বার্থে দিলে গুনাহ হবে না ইনশাআল্লাহ।
আর তারা যদি অজান্তে আপনার বাগান থেকে ফুল তুলে নিয়ে যায় তাহলে এতে আপনার কোন গুনাহ নাই কারণ। তা আপনার ইচ্ছার বাইরে ঘটেছে।
আল্লাহু আলাম।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব।
[Source]
Leave a Reply